দোষে গুণে মুদ্রাও ইশারা
ধরেন, কিছু তস্করকে ছাড়িয়া দেওয়া হইল
প্রহরীহীন এক নক্ষত্রবীথিতে। সেখানে তাহারা মনের আনন্দে পরপর কয়টি ব্যাঙ্কডাকাতি করিল। তাহার পর সেই মহাজাগতিক মুদ্রার
বস্তা লইয়া তাহারা করিবে কী! আমরা এইরূপ কোনও কাহিনির ভিতরে
নাই। দিন আনি দিন
খাই। অনেকে আনেও না, খায়ও না। তাহারা প্রসঙ্গের
বাহিরে। অজলচল। এই শব্দের কোনও তরজমা সম্ভবে না। কে আর বল্লালী টীকা ঘাঁটিতে যাইবে? নাম কি কোনও অনুষঙ্গ বহিয়া আনে? কণিষ্ক বলিলে আনে। পটল বলিলে নয়। পটল ছিল এক বালিকা, তাহার বাবা বাস চালাইতেন। আপনারা কেহ চিনেন না...
...
যেন বা ভূগর্ভের গহ্বর হইতে উঠিয়া আসিতেছে ঘোড়সওয়ারের দল। তাহাদের ছায়ামাত্র দেখা যাইতেছে। কোথায় ছিল উহারা! এই প্রশ্ন, এই বিস্ময়, অবান্তর হইয়া গিয়াছে এক জমকালো জমায়েতে। পিছনে অস্তায়মান সূর্য। অদৃশ্য হইতে উঠিয়া আসিয়া তাহারা
কাতার দিয়া দাঁড়াইতেছে। তাহাদের হাতের লাগাম দৃঢ়ভাবে ধরা। ঘোড়াগুলি ইশারামাত্র ছুটিয়া যাইবে
অভিপ্রেত দিকে। রক্তাভা মিশ্রিত
সোনালি আলোয় ঝলমল করিতেছে পটভূমি। গভীর কৃষ্ণবর্ণের মূর্তিগুলির অসি ঝলমল করিয়া উঠিল। দশদিক প্লাবিত করিয়া তাহারা উড়িয়া
চলিয়া গেল দিগন্তের দিকে...
...
দর্শক না-রহিলে আর দৃশ্যের অর্থ কী! তবু, কোনও রচনাই মুলতুবি থাকে না। মুহূর্তের স্তব্ধতার পর, হয়তো সেই মুহূর্ত কাহারও নিকট যুগান্তরের সামিল, তবু, নড়িয়া চড়িয়া বসে আলো ও ছায়া। দেখিবার কেহ না-রহিলেও তাহাদের
কিছু যায় আসে না...
...
সংশয়কেও এক রকম বিশ্বাস বলা চলে। পথের নানান বিভক্তিতে, শাখা-প্রশাখায়, জাগিয়া উঠা ধন্দ – সে তো পথিকেরই নসিব! হোঁচট খাইতে খাইতে, নানান ঝঞ্ঝাটে পয়জার হইতে হইতে, যে তবু চলিতেছে, সে-ই তো পথিক। সে জীবিত। বা, অতিজীবিত। টানিয়া নাহয় একটু লম্বা করা হইল তাহার জীবন। কারণ মৃত্যুর বাস্তবতা তো সেই অনন্ত অবধি ছড়ানো। আলোবছর জুড়িয়া শুধুই অন্ধকার। অথচ কৃষ্ণ জাদুও বলা যায় না তাহাকে। মৃত্যুর ভিতর তো কোনও বিস্ময় নাই, কোনও রহস্য নাই, একটি পাথরের টুকরার মতো এক নিরেট বাস্তবতা। পরিব্যপ্ত, নিরঙ্কুশ এক বাস্তবতা। যাহার দিকে তাকাইয়া ভয়ে থরথর করিয়া
কাঁপিতে কাঁপিতে মানুষ ঈশ্বরের জন্ম দিল। আর উলটা দিকে দাঁড়াইয়া ফিকফিক করিয়া হাসিতে থাকিল জীবন। যে নিজেও তাহার কূলকিনারা পায়
না। চলিতেই থাকে, আর বদলাইতেই থাকে...
...
সম্পর্ক এক শৃঙ্খল। যাহা রচিত হইতেও চায়, ভাঙিয়াও পড়ে। তাই বলিয়া অসম্পর্কের ভিতর কি
কোনও সংযোগ নাই! সেই পটলের কথা কি মনে রহিয়াছে আপনাদের, যাহার বাবা বাসচালক ছিলেন? না-থাকিলেই বা কী! স্মৃতিকে বিদায় জানাইতে পারিলেই বিস্মৃতির মহিমা গড়িয়া উঠে। সেই তো আমাদের সোনার খনি। সহসা কোন্ বুদ্বুদ ভুড়ভুড় করিয়া
ভাসিয়া উঠিবে। ফাটিয়া পড়িবে
অদেখা রংধনুকের ঠমক। একটি মায়াবী
মধ্যাহ্নের খচিত ফলক। হারমোনিয়াম। বা, কৃত্তিবাস মাহাতর চুলায় বসানো হাঁড়ির উপর ঝরিয়া পড়া শাল-মহুয়ার রাত্রিচর
আলো। কেহই দাঁড়াইবে না। গায়েব হইয়া যাইবে শূন্যে। এখনকার মুহূর্তগুলিও কি সেইরূপই
নয়! ইশারার উপর ফতোয়া দিতেছে কেউ। কেহ দিতেছে অসমাপিকার উপর। অথচ সকলেই মুদ্রা অর্জন করিতে চাহে। দোষে গুণে মুদ্রাও ইশারা...
...
এইফাঁকে এক গুহ্য কথা ফাঁস করা যাক। নারীর গভীরতা পুরুষ কোথা হইতে
পাইবে! সে ভাবে, সে অন্ধকারের দরোজা ভাঙিতেছে। সে ভাবে, সে নিজেকে বিস্তারিত করতেছে। কিন্তু তাহার তো সে-গভীরতা নাই। এই আক্রোশে, ক্ষোভে, কামরার পর কামরায় বলপূর্বক প্রবেশ করিতে করিতে, একদিন সে ধর্ষক হইয়া উঠে। এইভাবে পৃথিবীর আদিম কবিতাগুলি
রচিত। আর আগামী দিনের
কবিতাগুলি পড়িয়া আছে নারীর গর্ভে। কারণ সে ধারণ
করিতে পারে। পুরুষ চাহিলেও
যাহা পারিবে না। চাহিলেও কিছুতেই
আগামী দিনের কবিতা লিখা হইয়া উঠিবে না তাহার...
...
সেদিন সমুদ্রতীরের সভায় এক ময়ূরবাহন কব্জিতে-আঁটা ঘড়ি দেখাইয়া
সগর্বে কহিলেন – সময় এক বিমূর্ত ধারণা, এই বচন অতঃপর ভুল। হয়তো তাঁহার প্রত্যয় এইরূপ যে, ঘড়ি আর সময় উভয়েরই মালিক তিনি। তিনিই প্রস্তুতকর্তা, উভয়ের। দূরে, দিগন্তের দিকে, নক্ষত্র হইতে ঝরিয়া-পড়া শিশির ধরিবে
বলিয়া জাল বিছাইয়া বসিয়া আছে কিছু উদ্ধব। কে তাহাদের কানে এই মন্ত্রণা দিল, আউলাইয়া দিল সকল রন্ধন! কে বাঁশি বাজাইল বড়াই? দুনিয়ার যে বড় বিপদ। বাঁশিটি থামিতে দিও না...
...
সংগীত আর কোলাহল দুইই আসিয়া মিলিল এই প্রান্তরে। মিলিল রৌদ্র আর ছায়া। দিন আর রাত্রি। নারী আর পুরুষ। সকলেই অবনত মস্তকে ক্ষমাপ্রার্থী
কিছু। সকলেই উড্ডীন
নিশানের ব্যঞ্জনায় উল্লসিত কিছু। বেদনা ও আনন্দ আসিয়া মিলিতেছে তাই। মিলিতেছে মন্ত্র আর নীরবতা। এই মিলন কি এক অস্তিত্ববিলোপের
লীলা, এ কি আত্মধ্বংস? এ কি ক্ষণিকের উন্মাদনা, না কি এক দীর্ঘলালিত স্বপ্ন? এইসব প্রশ্ন কোনও উত্তরের প্রত্যাশা
করে না বস্তুত। ইহাদের মীমাংসা
অবান্তর...
পড়লাম
ReplyDelete