সরোজ দরবার-এর গুচ্ছ কবিতা







প্রার্থনা করি উপনিষদ

১)
আঁশের প্রয়োজনীয়তা মাছের আছে
আঁশ ছাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা মানুষের;

আঁশ থাকলেও মাছ
না থাকলেও মাছ-ই

আঁশ স্বয়ং তাই অদ্ভুত প্রয়োজনীয়তা

দাম্পত্য ও গণতন্ত্র
তাকে উপেক্ষা করতে পারে না।

২)
বাচ্যার্থ পেরিয়ে যিনি বাঙ্ময়
তিনি ঈশ্বর;
আমি মালি সামান্য
গাছের গোড়ায় মাটি খুসি
জল দিই, আগাছা সরাই
হিরণ্ময় ফুল ধরবে বলে

এক জীবনে নাও হতে পারে
ডুমুরের হিরণ্ময় ফুল দেখা
হবে কি না ভেবে থমকাই, দেখি,

ভূত ও ঈশ্বর
কারোরই ছায়া পড়ে না ঘড়িতে।

৩)
মনের দু’টো কথা লিখতে দেওয়ার জন্য
ধন্যবাদ জানাতে চাই – অন্নদাতাকে;
কে অন্নদাতা? মালিক না প্রভু না ঈশ্বর?
এই যে পেঁপেগাছ, এ কার সম্পত্তি
ইশ্বর, প্রভু না মালিকের!

আশ্চর্য কুদরতি!
তার ভিতর বসে ভাতের গরাস ভাঙি
দু’চারটে ভাত পাতের বাইরে রাখি

মালিক বা প্রভু বা ঈশ্বর
অথবা কেবলই পিঁপড়ের জন্য।

৪)
রোদ্দুরের ভিতর হাঁটাহাঁটি করে – ক্লান্ত লাগে
প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে যারা ফিরে গেল
আমিও তাদের দলে, ভিড়ে যাব ভেবেও
ফিরে আসি – রোদ্দুর চড়া হয়ে ওঠে
তারই গা ঘেঁষে তবু বসে থাকি, ক্রমাগত

রোদ্দুর কি অগ্নি-সমান? সর্বভুক?
মানুষকেও খেতে পারে সে
ক্ষুধার্ত বাঘের মতো!

ছায়ার ধারণা এঁকেছিলাম স্লেটে-পেন্সিলে
ভেজা তুলিতে দেখি সেসব
কবে যেন মোছা হয়ে গেছে!

৫)
নরম রাতের বুকে মাংস জমে আছে
রসুনের গন্ধ ভাসে – শরীরময়
এ বড় রান্নার সময়, তুখড় রান্নার
তবু ঘাম হয়, সর্বাঙ্গে, নুন ফোটে
আর জানা যায়, দূরত্বে রাত্রি সত্য নয়
সম্ভব নয় রান্না আর, এ চঞ্চলতায়-

তখন তোমার চোখের দিকে তাকাই
রাতের ভিতর এবার বাতাস, দীর্ঘশ্বাস

এদিকে ফুল ফোটারও সময় হয়ে আসে...

৬)
কেবলই স্তনের দিন এখন-
এত অহরহ স্তনে গোধূলী উষ্ণ হয়
ঘন শিহরন, ক্রমে অশ্লীলতাপ্রবণ –
নবীন চাঁদ আজও ওঠে নাকি আকাশে!
পূর্ণিমা আসে, পূর্ণিমা বুড়িয়ে যায়
আঁচল খবর পায়, তবু – কেবলই স্তনের
দিন নেমে আসে, হেমন্তের অবকাশে

আমাদের তাও চলে যাওয়াই ভাল
সহ্য হবে নাকি এত স্তনিত দিনকাল!
এই পাতাঝরা মরশুম, রক্তে ঘুম
বরং গোপনে খুঁজুক লুকনো লাল কুঁড়ি

কুঁড়িতেই সাধনা ফোটে, গোপন প্রণতি-
স্তনের আড়ালে তুমি থাকো যুবতী যেমতি।

৭)
এই যে এলে, আজ, আসোও না
এমনও তো কতদিন হয়;
যেদিন এসে বসো
আমার দুচোখ শান্ত হয়ে আসে
আমি প্রার্থনা করি
এই উপনিষদ

আর তো কোনো ধর্ম নেই-
ভালোবাসা অর্থে
শিখেছি কেবল এই বশে থাকা

চিঠিতে আর
কীই-বা লিখতে পারি বিশদ!

৮)
যে প্রত্যাখ্যান করছে
সেও কিয়দংশে প্রত্যাখ্যাত

বৃত্তের খোলা অংশই জীবন-

চাঁদের গায়ে চাঁদ
গুপ্ত, সাধনার মতো।

1 comment:

  1. আটখানাই আহ্লাদে আটখানা করার মতই।

    ReplyDelete

একঝলক

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

এক আশ্রমে গুরু এবং তার শিষ্যরা যখন সান্ধ্যকালীন ধ্যান শুরু করে তখন সেখানে আশ্রিত বিড়াল খুব শব্দ করায় তাদের ধ্যানের ব্যাঘাত ঘটে। গুরু ত...

পছন্দের ক্রম