সত্যান্বেষী
"এখানে সন্ধ্যা নামে, তার অর্থ এই নয়, সন্ধ্যাকালই প্রতিবার নেমে আসে শুধু
এই গ্রামও মাঝেমধ্যে সন্ধ্যা-কোলে উঠে বসে,
ব্যাপারটা বুঝে দ্যাখো, শ্রীমান অজিত"
এত বলে ব্যোমকেশ ব্যোমপানে ধোঁওয়া ছাড়ে,
ধানকাটা জমিতে বাতাস ওঠে ধূ ধূ
বিধবা-কপালে-টিপ সূর্য ঢলে পড়ে,
চলে যেতে যেতে ফিরে চায় অদ্বিতীয় শীত
আশ্বাস অপ্রাপনীয় নিখোঁজ হৃদয় দাঁ-র স্ত্রীর,
ডিটেকটিভ তাকে মধুস্বরে তবু
বলে যে, "ভয় কী, মাতঃ, আমি তো রয়েছি," দূরে মেহনতি মানুষের মেহনতি চটি
নির্ধান জমিনে শুয়ে, অতঃপর কিছু দূরে চোখে পড়ে, এ কী দৃশ্য চোখবাঁধা প্রভু,
ললাটে তিলক আঁকা ছাইয়ে ছাইয়ে লাট খাচ্ছে কার যেন
দুব্বো-ঢাকা বিষাদ-করোটি!
"এ গ্রাম কেমন গ্রাম, ধানপোড়া ভস্মও কালগুণে যে দেশের জমিতে সুসার!"—
অজিতের এঁড়ে প্রশ্ন, গোয়েন্দা শোনে না অতো, শুধু দ্যাখে, মৃত্তিকার কানায় কানায়
এত যে আনন্দ সে তো যুক্তি নয়, কল্পনা; হৃদয় কি তাই যত স্মৃতি আপনার
নিয়ে ছুটে গিয়েছিল লুট হওয়া গোলাটির দ্বারে?
মধ্যযামরূপী ভৈরবের পায়ে
কুটেছিল মাথা? যদি না-ই কোটে তবে তার মাথাটি কাটিল কে বা?
কাটিল কেন বা?
"দ্যাখো হে অজিত, মহাচিন্তাকারী যে মানুষ মহাভ্রম তারই হয়,
বাজে পোড়া গাছ
পুনর্বার বজ্রাহত হয় না কখনও, মৃতকাষ্ঠে তবু রয়ে যায় তড়িতের আঁচ,"
অজিতের প্রশ্ন, "কিন্তু হৃদয়ের কী হইল?", ব্যোমকেশ বলে, "তুমি, আরে তোবা তোবা,
এখনও হৃদয়ে প'ড়ে! তার চেয়ে দ্যাখো, ওই বধূটির অশ্রুস্নাত ধানজমিটিতে
লবণার্দ্র ধানোদ্গম কখনও হবে না আর,
এ কী আরও চিন্তা নয়, বলো, প্রিয় মিতে"
অস্তমিত সবিতাকে সাক্ষী রেখে নিরুদ্দিষ্ট হৃদয়ের সঙ্গে এসে
মেশে নিরুদ্দেশ,
"কী শাস্তি করেছি যার এত পাপ পাই" বলে অজিতের হাতে
অশ্রু মোছে ব্যোমকেশ।
No comments:
Post a Comment